হটাৎ আমাকে সিঁড়ির দেওয়ালে চেপে ধরলো তৃষ্ণা। তারপর আমার বুকে আঁচড় কাটতে কাটতে ও বললো-
'সব কিছুতে অজুহাত তোমার! এত পালাতে চাও কেন? '
'পালাচ্ছি কোথায়? এ তো হাইজিনের ব্যাপার।'
তৃষ্ণা এবার আরও জোরে সিঁড়ির দেওয়ালে চেপে ধরলো আমাকে। তারপর আমার বুকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে, আমার গলার উপর আলতো করে কামড় দিলো ও।
ওর কামড়ে, মৃদু ঊহঃ শব্দ করলাম আমি। তারপর ওকে বললাম-
বিপদ কিন্তু তুমি নিজেই আহ্বান করছো। সামলাতে পারবে তো?
তৃষ্ণা হাসলো। আমার বুকে চিমটি কেটে ও বললো
'কেন? বিপদকে ভয় পাই নাকি আমি? '
বেশ, আগে স্নান করে নাও। তারপর বুঝবে।
এমন সময় নীচ থেকে কাকীমার গলার আওয়াজ ভেসে এলো-
'তৃষ্ণা, রাত প্রায় দুটো। তাড়াতাড়ি স্নান করে নীচে নেমে আয়।'
আমার জামার বোতামগুলো লাগাতে লাগাতে ও বললো-
'যাক গে, মা তোমাকে বাঁচিয়ে দিলো।'
বাঁচালো মানে? না বাঁচালে কি করতে তুমি?
'কি করতাম না, সেটাই বলো। এই সিঁড়ির উপরই তোমাকে আলুকাবলি বানাতাম।'
হেসে ফেললাম আমি। তারপর ওর হাত ধরে সিঁড়ি চড়তে চড়তে বললাম-
জানো? বুকটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো!
'কেন? '
তোমার এই অদ্ভুত শব্দগুচ্ছগুলো বড় মিস করছিলাম।
আমার কাঁধে হাত রেখে আমাকে আলতো একটা কিস করলো তৃষ্ণা। তারপর বললো-
'বড্ড মিস করছিলাম তোমাকে।'
ওর দিকে চেয়ে হাসলাম আমি। কিন্তু কিছু বললাম না। তৃষ্ণা জিজ্ঞেস করলো-
'হাসলে কেন? '
এমনিই। হাসতে ইচ্ছে হলো, তাই হাসলাম।
তৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে ওর ঘরে ঢুকলাম আমি। ঘরে ঢুকেই, তৃষ্ণা দেওয়ালের দিকে চেয়ে রইলো। অপলকে।
দেওয়ালে, আমাদের বিয়ের বড় একটা ছবি। ওকে দেওয়ালের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে, ঠোঁটের কোণে হাসলাম আমি। তারপর বললাম-
শোনো, তুমি এ ঘরে স্নান করো। আমি ও ঘরে যাচ্ছি।
কথাটা বলেই, আলমারি থেকে ওর কিছু জামাকাপড় বের করে বিছানার উপর রাখলাম। তারপর ওর উদ্দেশে আমি বললাম-
যেটা ভালো লাগে, নিও। আমি গেলাম।
তৃষ্ণা তখনও দেওয়ালের দিকে চেয়ে। তাই নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। অন্য ঘরের বাথরুমের উদ্দেশে।
এই ঘরের বাথরুমে কোন হট ওয়াটার সিস্টেম নেই। তাই ঠান্ডা জলেই স্নান করলাম। আসলে, ঠান্ডা বা গরম, কিছুই যায় আসে না আমার। চার বছর কাশ্মীরে ছিলাম আমি। কাশ্মীরের ঠান্ডা আমাকে কাবু করতে পারে নি, তো কলকাতার ঠান্ডা আমাকে কাবু করবে কি করে?
শাওয়ারটা খুলে দিয়ে শাওয়ারের নীচে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, বাব্বাঃ বাঁচা গেলো। এতক্ষণ কেমন যেন এক অস্বস্তি হচ্ছিলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইউনিফর্ম তৈরী করা, জুতা পালিশ করা, কমান্ড হাসপাতালে যাওয়া, গ্রামে গিয়ে ফিরে আসা, তারপর এয়ারপোর্ট যাওয়া। সারাদিনে প্রায় তিনশো কিলোমিটার পথ পরিক্রমণ করলাম। তারপর রাত ১ টার পর বাড়ি ফিরলাম আমরা। কম ধকল গেলো আজ!
স্নান করে তৃষ্ণার ঘরে ফিরে এলাম আবার। ঠান্ডাতে, তখনো বেশ কাঁপছি আমি। ঘরে ঢুকে দেখি, তৃষ্ণা নেই। বুঝলাম, বাথরুমে রয়েছে ও। জামা কাপড় পরতে যাবো, এমন সময় তৃষ্ণার গলার আওয়াজ ভেসে এলো-
'ভেতরে এসো তো একবার।'
কেন?
'আগে তো এসো, তারপর বলছি। '
ওর বাথরুমের দরজা বন্ধ ছিলো। কিন্তু একটু চাপ দিতেই দরজা খুলে গেলো। ঘরে ঢুকে দেখি, তৃষ্ণা শাওয়ারের মধ্যে। শাওয়ারের ভেতর থেকে ও বললো-
'ভেতরে এসো।'
শাওয়ারের দরজা তখনো বন্ধ। বুঝলাম না, আমাকে ও ভেতরে ডাকছে কেন!
শাওয়ারের দরজা খুলে উঁকি মারতেই, আমার হাত ধরে আমাকে শাওয়ারের মধ্যে টেনে নিলো ও। দেখি, তৃষ্ণার পরণে কিছু নেই। কেবল কটিদেশে ছোট এক অন্তর্বাস।
প্রথমে আমার দিকে চেয়ে হাসলো ও। তারপর হুকুম করলো-
'শাওয়ারের নীচে দাঁড়াও।'
কোন কথা না বলে, শাওয়ারের নীচে দাঁড়ালাম আমি। আমার গায়ে জল পড়তেই, আমার সারা গায়ে সাবান মেখে দিলো ও। তারপর, হটাৎ আমার বুকের উপর ওর মাথা চেপে ধরলো তৃষ্ণা।
ওকে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু ও আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলো। আমাকে কোন কথা বলতে দিলো না। আসলে, ও আমাকে অনুভব করতে চাইলো। গভীর করে অনুভব করতে চাইলো।
তৃষ্ণার নগ্ন সিক্ত বুক এখন, আমার বুক ছুঁয়ে। ওর উষ্ণ ভেজা বুকের স্পর্শ, প্রাণ জুড়িয়ে দিলো আমার। আজকের যত ক্লান্তি অবসন্নতা, সব কিছু মুহূর্তেই উবে গেলো।
ভাবলাম, এজন্যই পুরুষের একটা নারী দরকার। আর নারীর দরকার একটা পুরুষের। একজন অন্যজনকে ছুঁয়ে দিলেই, ক্লান্তি দূরে হয়ে যায়। দুঃখ দূরে হয়ে যায়। জীবনের সহস্র না পাওয়ার যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়।
একজনের স্পর্শ অন্যজনের কাছে, মৃতসঞ্জীবনী সুধা। সর্ব যন্ত্রণার মহৌষধি। জীবনে বেঁচে থাকার পাথেয়। অবসাদে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। নারী পুরুষের পারস্পরিক স্পর্শ ছাড়া, জীবনের সুখ আর কোথায়? জীবনের বাকি সব কিছুই তো যন্ত্রণা! নারী পুরুষের স্পর্শকে যারা হীন চোখে দেখে, তারা জীবনকে কতটা বোঝে? পৃথিবীকে কতটা বোঝে? নিজেকে কতটা বোঝে?
© অরুণ মাজী
Painting JWG
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem