Nabinama (নবিনামা) , An Epic, Canto-2 Poem by Sayeed Abubakar

Nabinama (নবিনামা) , An Epic, Canto-2

Rating: 5.0

নবিনামা
সায়ীদ আবুবকর
--------------------
দ্বিতীয় সর্গ

ধাত্রী-গৃহে

এ এক আজব দেশ, কি অদ্ভুত এর
প্রথা, শিশুকে জন্মের পরপরই দেয়া
হতো ঠেলে ধাত্রী-গৃহে! মক্কার তাবৎ
অভিজাত পরিবার পাঠাতো তাদের
সদ্যজাত শিশুকে গ্রামীণ পরিবেশে।
বিনিময়ে ধাত্রীগণ উপহার পেতো
প্রচুর সম্পদ। তায়েফের হাওয়াজেন
গোত্রের একটি শাখা বনি সাআদ ছিলো
প্রসিদ্ধ এ-পেশায়। হালিমা সাআদিয়া
এ-গোত্রেরই এক নারী। সে-বছর ছিলো
খরা। ফসল হয়নি ক্ষেতে। হালিমার
দুগ্ধ-শিশু পায় না বুকের দুধ, কাঁদে
সারা রাত্রি খিদেয়। দারুণ খাদ্যাভাবে
শুকায়ে গিয়েছে স্তন। ভাগ্য অন্বেষণে
স্বামীকে নিয়ে সে উঠলো গাধার পিঠে।
ভুললো না সঙ্গে নিতে দুধের শিশুকে।

বনি সাআদের আরো কিছু পরিবার
হয়েছিল বের একই উদ্দেশে। রুগ্ণ
গাধা হালিমার, ছুটতে পারে না জোরে।
সবার পশ্চাতে তাই গিয়েছিল তারা
পড়ে। বিত্তশালীদের সব শিশু নিয়ে
আসছিল ফিরে লোকজন, হাসিমুখে।
কি-কপাল হালিমার! হালিমা তখনো
পৌঁছোতে পারেনি মক্কা। রুগ্ণ তাঁর গাধা
ছুটতে পারে না জোরে। তাঁরা গিয়ে পেল
উজাড় শহর। ধনীদের ছেলেমেয়ে
নিয়ে গেছে যেন ছেঁকে। ফেলে রেখে গেছে
একটি এতিম শিশু সমস্ত মক্কায়।
নাম তার মহম্মদ। বললো হালিমা,
"হায় রে অদৃষ্ট! এ-শিশুর পিতা নেই।"
স্বামী হারিস ইবনে আবদুল উজ্জা
বললো সমস্ত শুনে, "এত পথ এসে
ফিরে যাবো খালি হাতে? নিয়ে চলো তাঁকে।"
ছুটলো হালিমা ফের আমিনার গৃহে।
দুচোখের জলে ভিজে আমিনা যখন
তুলে দিলো পুত্রধন হালিমার কোলে,
আকাশ পাঠালো মেঘ। ছায়া দিয়ে সেই
মেঘ চলতে লাগলো পাছপাছ। অকস্মাৎ
উথলে উঠলো দুধ বুকে। হালিমা তা
পেল টের। মরা গাঙে উঠেছে জোয়ার।
থইথই দুগ্ধভারে স্তন ন্যুব্জপ্রায়।
পথিমধ্যে পড়লো সে বসে। সদ্য পাওয়া
শিশুটির মুখে তুলে দিলে ডান স্তন,
করতে লাগলো পান পরম তৃপ্তিতে।
অতঃপর দিতে গেল বাম স্তন যেই,
ফিরিয়ে নিলো সে মুখ। বিস্মিত হালিমা
শিশুটির ব্যবহারে। অবশেষে তাঁর
দুগ্ধপূর্ণ বাম স্তন তুলে দিলো তাঁর
নিজের পুত্রকে। ভরে গেল পেট দুধে।
দুই শিশু নিয়ে, অতঃপর, হালিমা ও
তাঁর স্বামী রুগ্ণ গাধার উপর চড়ে
বসতেই, ছুটতে লাগলো যেন ঘোড়া।
ছুটতে ছুটতে অতিক্রম করে গেল
বনি সাআদের আগে-ফেরা কাফেলাকে।
বিস্ময়াভিভূত তারা করলো জিজ্ঞেস,
"এটা কি, হালিমা, আগেকার সেই গাধা? "
"রুগ্ণ সেই গাধা", বললো হালিমা হেসে।

পৌঁছোলো বাড়িতে তাঁরা সবার আগেই।
কিশোরী সায়মা জুড়ে দিলো চীৎকার
মহানন্দে। এ-কি স্বর্ণশিশু! কি-সুন্দর!
কি-সুন্দর আাহা! হাসে যেন সুধাকর!
করলো সে আদর আপ্লুত হয়ে। পরে
দিলো সে খবর, তাদের রুগ্ণ উটনী
দিয়েছে প্রচুর দুধ, খেয়েছে সবাই
তৃপ্তিভরে; পালানে এখনো আছে জমে।
শুনে বিস্ময়াভিভূত সায়মার পিতা
দোয়ালো সে-দুধ। করলো স্রষ্টার স্তুতি
উচ্চৈঃস্বরে। অতঃপর বললো, "হালিমা,
সত্যিই কল্যাণময় এক পুণ্য শিশু
এনেছো তোমার সাথে।" কিশোরী সায়মা
আশ্চর্য শিশুকে তুলে নিলো তার কোলে,
আর আবৃত্তি করতে লাগলো সুকণ্ঠে:
"আমাদের মহম্মদ সবচেয়ে ভালো।
জীবিত থাক সে আমাদের মাঝে। সুশ্রী
বলিষ্ঠ যুবকে পরিণত হোক। আমরা
দেখবো দু-নয়ন ভরে তাঁকে। বড় হয়ে
সে যেন দখল করে নেয় ইয়েমেন,
সিরিয়া ও রোম। যে শত্রুতা করবে তাঁর
সাথে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রভু, তাঁকে
মহাসম্মানের অধিকারী করে দাও।"

সায়মা আবৃত্তি করে হেলেদুলে, আর
শিশুনবি কান পেতে শোনে আর পুণ্য
চোখে পিটপিট করে চায়। হালিমাকে
ডেকে শোনায় সায়মা, "কুরাইশি ভাই
কিভাবে তাকায় দ্যাখো পণ্ডিতের মতো।
আমাদের মহম্মদ প্রজ্ঞাবান শিশু।"
শাসায় হালিমা, "ছি-ছি! এভাবে বলে না;
লোকেরা নজর দেবে। বদনজরে যে
কুসুমও শুকিয়ে যায়! " এই বলে তাঁকে
বুকের ভিতরে নিয়ে পালায় হালিমা
ঘরের ভিতর, যেন কোনো গুপ্ত ধন
লুকাবে সিন্দুকে। এসেছে আশ্চর্য শিশু,
শুভ আগমন যাঁর দিয়েছে বহায়ে
আনন্দের শিহরণ বাতাসে বাতাসে,
পুষ্পে পুষ্পে, পত্র ও পল্লবে। হালিমার
জমি-জিরাত, ছিলো যা বিরান, শষ্পহীন-
শস্যহীন বারো মাস—উঠলো তা বেঁচে
নতুন বৃষ্টিতে ভিজে। গজালো সেখানে
ঘাস। পশুপাল তাঁর, সেই ঘাস খেয়ে
হৃষ্টপুষ্ট হলো। দিতে লাগলো দুধ তারা
বালতি ভরে ভরে। বললো হারিস
ইবনে আবদুল উজ্জা, "হে হালিমা!
বরকত এনেছে বয়ে এ-পবিত্র শিশু
আমাদের ঘরে। চোখে চোখে রেখো একে।"

লোকেরা অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দ্যাখে
হালিমার ভরা মাঠ ফসলে ও ঘাসে।
উৎফুল্ল মেষপাল ভরা পেট নিয়ে
ঘরে ফেরে প্রতিদিন। সুখ-স্বচ্ছলতা
উপচে উপচে পড়ছে তাঁর ঘরে-দোরে।
ভাবে তারা, কী রহস্য এর? বুঝি তাঁরা
পেয়ে গেছে জাদুর চেরাগ! সে-চেরাগ
আর কিছু নয়, আমিনার পিতৃহারা
ধন, হালিমার দুধছেলে, আব্দুল্লাহ-
সায়মা-উনাইসা-হুজাইফার দুধভাই
মহম্মদ রহমাতুল্লিল আলামিন।

আনন্দের শেষ নেই, সুখ ও শান্তির,
হালিমার সংসারে। ছোট থেকে বুড়ো,
এ-শিশুকে নিয়ে মগ্ন সকলেই। যে-ই
চায় একটিবার তাঁর পুণ্য মুখে, যায়
তার ঠাণ্ডা হয়ে বুক। হালিমার গৃহে
রাত্রিদিন গড়াগড়ি খায় জ্যোৎস্নারা,
যেন পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে।
ছুটে আসে দূর থেকে কত যে মানুষ
একটা নজর দেখতে সেই চাঁদমুখ!

হেসে-খেলে, নেচে-গেয়ে, আদরে-সোহাগে
কেটে গেল দু-বছর দেখতে দেখতে।
দুধ ছাড়ানোর হয়েছে সময়। আর
প্রথা অনুসারে নিজের মায়ের কাছে
পালিত শিশুকে ফিরিয়ে দেওয়ার দিন
এসেছে ঘনায়ে। শুনে কেঁদে জারজার
কিশোরী সায়মা। কাঁদে আর বলে: "না, না,
দেবো না মহম্মদকে কোথাও, মা, যেতে! "
হালিমার ত্রস্ত চোখ ভিজে যায় জলে।
কোলে তুলে নিয়ে আকাশের চাঁদ, বলে:
"কোন্ অধিকারে, বাছা, রাখি তোরে কাছে!
জননী যে তোর চাতকের মতো আছে
চেয়ে তোর পথ! আমি তোর দুধমাতা—
এছাড়া তো নই।" বলে দুচোখের পাতা
ভেজায় সে শোকে। তা দেখে ফোলায় ওষ্ঠ
শিশুনবি, যেন কাঁদবার অভিপ্রায়ে
মেলেছে পাপড়ি শতদল। সেই পুষ্প
বুকে নিয়ে, ‘কাঁদে না! কাঁদে না! " বলে বলে
কত যে বোলায় হস্ত শিরে-পৃষ্ঠদেশে।
"কী হয়েছে? " বলে ঝটিকার পায়ে আসে
সায়মার পিতা। কে যেন দিয়েছে লেপে
চোখেমুখে তাঁর গভীর বিষাদ। দুঃখ
উঠেছে উথলে, বুকে। মাতিয়ে জীবন
উত্তাল আনন্দে, মহম্মদ চলে যাবে—
চলে যাবে চিরতরে ফেলে এ-কুটির,
আসবে না ফিরে আর— এই ভাবনায়
হয় না রাতের ঘুম। কোনোদিন, হায়,
দেখতে পাবে না তাঁর পদ্মপুষ্পমুখ—
হৃদয় শুকিয়ে যায়, ভাবলেই । চোখ
তাঁর ছলোছলো। "আমাদের মহম্মদ
কী চায় আমাকে বলো! " বলে তুলে নেয়
তাঁকে কোলে। কাঁদে সায়মা পিতার বস্ত্র
ধরে, "বলো, বাবা, আমাদের মহম্মদ
যাবে না কোথাও আমাদের ছেড়ে, বলো! "
শুনে পিতাও যে তার, নির্বাক নির্ঝর
যেন, ছেড়ে দেয় অশ্রুজল; "বোকা মেয়ে! ",
কী করে সে বলে আর কিভাবে বুঝায়:
"কোন্ সূত্রে বাঁধি বল্ পরের পুত্রকে? "

ঠিক হলো দিনক্ষণ মক্কায় যাওয়ার।
সায়মাও গেল সাথে। মক্কার মার্তণ্ড
তায়েফের দোলনায় দুলেছে দোদুল
দু-বছর। দুলিয়েছে তায়েফবাসীর
দেহ-মন দুর্লভ হাসিতে। তাঁকে ফের
সমস্ত নিয়ম ভেঙে, প্রথা ভেঙে, নিয়ে
আসবে তায়েফে, হালিমার গৃহে— সেই
স্বপ্নে বিভোর সায়মা। হালিমাও খোঁজে
কত যে বাহানা। থেকে থেকে কাঁদে মন—
বুকজুড়ে উথলে উঠেছে শোক, চোখে
নেমেছে যে অমানিশি। কি-মায়ার জালে
বেঁধেছে এ-শিশু! কী হবে উপঢৌকন,
বিত্ত-বৈভব, যদি না মহম্মদ যায়
সাথে! তাঁর একটা হাসির বিনিময়ে
দিয়ে দেয়া যায় সবকিছু। কি-আজব
শিশু, কি-অমূল্য শিশু এ যে, যেই তাঁকে
দ্যাখে একটিবার, সেই বোঝে, যেরকম
স্বর্ণ দেখে অশিক্ষিত জনও বোঝে স্বর্ণ-
মূল্য তার। আমিনাকে বুঝায় হালিমা
মক্কা নগরীর নানা সমস্যার কথা;
বলে, "শুনেছি, মক্কায় পড়েছে ছড়িয়ে
সংক্রামক ব্যাধি নানা। যদি চান, নিয়ে
যাবো ফিরিয়ে আমরা মহম্মদকে। দেবো
কিছুদিন আরো রেখে আমাদের কাছে।
ভয় হচ্ছে, মক্কায় থাকলে এ-সময়,
কোনো ক্ষতি হতে পারে তাঁর। না জানি কী
হয়ে বসে অসুখ-বিসুখ! " আমিনা তা
শোনে মন দিয়ে আর দ্যাখে চেয়ে চেয়ে
পিতৃহারা পুত্র তাঁর নয়নের মণি
কি-ফুর্তিতে করছে খেলা সায়মার কোলে!
সত্যিই তো, গুটি-বসন্তের প্রাদুর্ভাবে
ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে মক্কায়! যদি
আক্রান্ত হয় সে অন্য শিশুদের মতো,
থাকলে এখানে! হালিমা চাচ্ছেই যদি
নিয়ে যেতে ফের, যাক না, থাকুক গিয়ে
নিরাপদে কিছুদিন আরো দুধমার
কাছে। ক্ষতি কিবা তাতে! এ-হেন সিদ্ধান্তে
আমিনার, ছড়িয়ে পড়লো মহাখুশি
হালিমার সারা মুখে, মাটির কুটিরে
যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে হেজাকের আলো
অন্ধকার রাতে। ছুটে গিয়ে দ্রুত বেগে,
সেই বার্তা জানালো পিতাকে মহানন্দে
কিশোরী সায়মা। পরম করুণাময়
মহান স্রষ্টার দরবারে পিতা তার
জানালো শুকরিয়া প্রাণভরে। অবশেষে
নানা উপঢৌকনে আমিনা ভরে দিয়ে
হালিমার গাধা, জানালো বিদায়। দিক-
বিজয়ীর বেশে ফিরলো সায়মা গৃহে।
লোকজন ছুটে এসে দেখতে পেলো ফের
সূর্যোদয়-মুখ তাঁর; মুহূর্তেই গেল
ঘুচে, অন্ধকার যত জমে ছিলো মনে।

শিশু মহম্মদ নক্ষত্রের পায়ে ছোটে
হালিমার আঙ্গিনায়; আলোকচ্ছটায়
চমকায় চারদিক। পাড়ার শিশুরা
পতঙ্গের মতো এসে ধরে ঘিরে, যেন
বিদ্যুতের বাতি কোনো রাত্রির শহরে।
দুধভাই আবদুল্লাহ-হুজাইফা আর
দুধবোন উনাইসা-সায়মাও এসে
মাতে সে খেলায়। হালিমার গৃহকোণে
বসে রোজ চাঁদের বাজার। তাই দেখে
জুড়ায় নয়ন হালিমা ও তাঁর স্বামী।

বাড়ির পাশেই বড় মাঠ হালিমার।
সে-মাঠে চরাতে যায় মেষ দুধভাই
আব্দুল্লাহ।মহম্মদ খোঁজে তাকে সারা
বাড়ি। হালিমা বুঝায় তাঁকে কতভাবে,
তবু সে নাছোড়, তাঁর চা-ই আব্দুল্লাহকে।
‘তোমার ভাই যে মেষ নিয়ে গেছে মাঠে! '
মহম্মদ ধরে জিদ—সেও যাবে মাঠে,
চরাবে সে মেষ। হালিমার হাত ধরে
ছোটে শিশু মহম্মদ। অবাক নয়নে
মেষেরা, ঘাসের কথা ভুলে, চেয়ে থাকে
তাঁর দিকে। যেন পড়ে গেছে শোরগোল
মেষপালে— ‘মহম্মদ! মহম্মদ! 'ধ্বনি
আছাড়ি পিছাড়ি খায় মরুর বাতাসে।
মেষদের সাথে মেতে ওঠে আব্দুল্লাহ
আর শিশু-মহম্মদ মধুর খেলায়।
তাই দেখে ফিরে যায় বাড়ি ফুল্ল-মনে
দুধমা হালিমা। যেতে না যেতেই আসে
ছুটে সায়মার পিতা। কিছুক্ষণ আরও
মেষ চরানোর খেলা খেলে, ফিরে চলে
তাঁরা ঘরে। এরপর থেকে প্রায়দিনই
আব্দুল্লাহ-মহম্মদ যেতে থাকে মাঠে।
উন্মুক্ত আকাশ, বিশাল পৃথিবী আর
প্রকৃতির নানা রঙ দেখে ভবিষ্যৎ-
নবী চমকে চমকে ওঠে। মেষপাল
তাঁকে দেখে লুটায় আনন্দে, বাতাসেরা
নৃত্য করে চলে খেজুরপাতায়, গলা
ছেড়ে গান ধরে বনের পাখিরা। তাঁকে
দেখে যেন চিনতে পারে না আবদুল্লাহ;
মনে হয়, ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কেউ।
ভয়ঙ্কর কাণ্ড এক একদিন ঘটে
গেল মাঠে, আকস্মিক। নিত্যকার মতো
করছিল তাঁরা খেলা। হঠাৎ দুজন
লোক, দুধসাদা বস্ত্র পরিধানে, এসে
ডাকলো মহম্মদকে। তাঁকে নিয়ে তাঁরা
চললো নির্জনে। দূর থেকে দেখছে সব
আব্দুল্লাহ। দেখলো সে, তাঁকে ধরে তাঁরা
শোয়ালো মাটিতে। অতঃপর খুব দ্রুত
ফেঁড়ে ফেললো তাঁর ছিনা। তাই দেখে ভয়ে
কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেল আব্দুল্লাহ
বাড়ি। মাকে গিয়ে বললো সমস্ত কথা।
হালিমা ও তাঁর স্বামী উল্কার গতিতে
ছুটে এলো মাঠে। এসে দেখতে পেল তাঁরা,
একাকী দাঁড়িয়ে মহম্মদ; কাঁদামাটি
তাঁর সারা গায়ে। সে বললো, দুটো লোক
এসে চিরে ফ্যালে তাঁর বক্ষদেশ । ফেলে
বের করে নেয় তাঁর হৃৎপিণ্ড, যা একটি
সোনার বাটিতে রেখে, ফ্যালে ধুয়ে। ফের
সেটি বুকের ভিতরে পুরে, জোড়া দিয়ে
দেয় তাঁর বুক। তারপর কোথায় যে
হয়ে যায় তাঁরা অদৃশ্য! হালিমা তাই
শুনে, জুড়ে দেয় আর্তনাদ। ‘মহম্মদ!
হায় মহম্মদ! ' বলে চাপড়ায় বুক
আর বলে, "আমিনাকে আমি কী জবাব
দেবো, হায়! " মহম্মদ বলে, "আমি ঠিক
আছি, দ্যাখো।" হালিমার ভয় তাতে কাটে-
না একটুও। তাঁকে নিয়ে তারা ফিরে আসে
বাড়ি। ‘মহম্মদ! মহম্মদ! ' বলে কাঁদে
কত, সায়মাও। কোর্তা খুলে তাঁর, কত-
বার দ্যাখে তাঁর বুক তন্ব তন্ব করে
হালিমা, কাটার কোনো দাগ আছে কিনা
তাঁর ছোট্ট বক্ষ-'পরে। হারিস ইবনে
আবদুল উজ্জা হালিমাকে ডেকে বলে,
"চলো হে হালিমা, যাঁর পুত্র তাঁর কাছে
দিয়ে আসি। ভয় হচ্ছে এখানে থাকলে
হয়ে যেতে পারে তাঁর বড় ধরনের
কোনো ক্ষতি।" সেইদিনই তাঁরা সেজেগুজে
মক্কায় চললো ছুটে। বললো আমিনা,
"তুমি তো নিজেই কত না আগ্রহ করে
নিয়ে গেলে তাঁকে! ফিরে এলে কেন তবে? "
অশ্রুসিক্ত বললো হালিমা সব খুলে।
সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে করলো জিজ্ঞেস
আমিনা, "তুমি কি বলতে চাচ্ছো, তাঁর 'পরে
আছর পড়েছে কোনো অশুভ শক্তির? "
জানালো হালিমা, "আমার তো মনে হচ্ছে
তা-ই! " আমিনা বললো, "হে হালিমা, তবে
শোনো, সে যখন এলো পেটে, আমি স্বপ্ন
দেখলাম। দেখলাম, আমার ভিতর
থেকে একটা আলো বের হয়ে চতুর্দিক
করে তুললো উজ্জ্বল। সে-আলোয় আমি
স্পষ্ট দেখতে পেলাম বসরার সুউচ্চ
রাজপ্রাসাদ। সে ক্রমশ আমার গর্ভে
বৃদ্ধি পেতে থাকলো। খোদার কসম, এত
আরামদায়ক গর্ভধারনের কথা
কোথাও শুনিনি আমি। যখন প্রসব
করলাম তাঁকে, তাঁর হাত দুটো ছিলো
মাটিতে এবং আকাশের দিকে ছিলো
উঁচু করা তাঁর মাথা। মনে রেখো, কোনো
অশুভ শক্তির কাছে আমার এ-পুত্র
নোয়াতে আসেনি শির।" অবাক বিস্ময়ে
রইলো হালিমা চেয়ে যেন উঁচু কোনো
পর্বতের দিকে, ছুঁয়েছে যা আসমান।

------

COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Sayeed Abubakar

Sayeed Abubakar

Jessore / Bangladesh
Close
Error Success