ভোরের নরম স্তব্ধতায় উঠে আসে কান্না, by Ink Soul
ভোরের নরম স্তব্ধতায় উঠে আসে কান্না,
পৃথিবীর কন্যা, যেখানে নদীগুলো গায় গানের ধ্বনি।
তার চোখ—খেলা করে বর্ষার মেঘের ছায়া,
তার ত্বক যেন প্রথম সূর্যের আলোয় দ্যুতি ছায়া।
প্রকৃতি আঁকে তার শিল্পের ছবি,
হৃদয়েতে তার ছন্দ বাজে চিরকাল ববি।
পাতার সাথে দোলে, পাথরে কথা বলে,
যে সত্য জানে, শুধু হাওয়া সেই কথা তোলে।
তার মুখ—কমলার মতো দীপ্তিময়,
তারা বুনে যে রেশম, তার মতোই কোমল পরিচয়।
ঠোঁট গায় বেদ-মন্ত্রের সুর,
স্বপ্ন ভাসে গঙ্গার পারে দূর।
ঋতুর মতো ধীর, জ্ঞানীর মতো নরম,
ঋষিদের বনেই তার চেতনার বরম।
ভালোবাসা আসে কোমল, গভীর আলিঙ্গনে,
এক স্পর্শ, এক মুখ—যা বাঁধে অদৃশ্য বন্ধনে।
হরপ্পার মৃত্তিকা থেকে অশোকের শান্তি,
তার হাসি-বেদনা খুঁজে পায় মুক্তি।
উপনিষদের গভীর সত্যে বাঁধা,
তার চাহনিতে ঘুরে যায় মহাবিশ্বের খাতা।
ব্রহ্মপুত্রের গর্জন, গঙ্গার স্রোত,
তার হাসিতে মিশে পেখমের রঙধনু-প্রভাত।
মুঘল গম্বুজ, তামিল কবিতা,
তার আত্মায় ফুটে ওঠে অনন্তের গীতা।
কিন্তু একদিন বজ্র বিদীর্ণ আকাশ,
আগুন নামে যেখানে চাই শান্তির আশ্বাস।
এক দাগ কেটে দেয় হৃদয় ও ভূমি,
র্যাডক্লিফ রেখা—ক্ষমতার এক নির্মম সীমা।
১৯৪৭—ভাই হয় শত্রু,
পাঞ্জাব থেকে বাংলা—সবই রক্তাক্ত যন্ত্রণা, অশ্রু।
সীমানা কাটে আত্মায় ধারালো তরবারির মত,
ভালোবাসা মুছে যায়—ঘৃণার রাজত্ব যত।
তার মুখ, যা ছিল প্রকৃতির গীত,
ভেঙে পড়ে সেরামপুরের শুকনো মৃত্তিকাতে চিরন্তন রীত।
প্লাসির লোভ, জালিয়ানওয়ালার কান্না,
যুদ্ধ তার তারা-চোখ নিভিয়ে দেয় মানা।
কারগিলের তুষার, পুলওয়ামার বিস্ফোরণ,
বর্তমান আজও বয়ে চলে অতীতের দহন।
অযোধ্যার চোখে জল, কাশ্মীরের নদী রক্তবর্ণ,
তবু সে ধরে রাখে উভয়কে অশ্রুর অনর্গল ধরণ।
রোম ভেঙেছিল, অশোক কেঁদেছিলেন,
বার্লিন দ্বিখণ্ডিত, হিরোশিমা পুড়েছিল বিনাশে।
প্রতিটি সময়ের চাবুক তার গায়ে আঁকে
বিজয়-পরাজয়, সত্য-মিথ্যার দাগে।
ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল বাঁধে তার নাম,
তবু আত্মা তার জ্বলে—লজ্জার ঊর্ধ্বে সম্মান।
কেন ভাই ভাইয়ের রক্ত চায়,
মৃত্যুর গন্ধে দম বন্ধ করে রাখে যায?
কেন মন্দিরে, মসজিদে জ্বলে ক্রোধের অনল,
যন্ত্রণার ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে রাত জুড়ে চল?
সে দাঁড়িয়ে থাকে—ব্যথার সমুদ্রের দ্বীপ,
যেখানে শান্তি ডুবে যায়—বিশ্বাসের অভিশাপ নীপ।
না কোনো মানচিত্র, না কোনো পতাকার দাবি,
ভেঙে দিতে পারে তার ভালোবাসার অভিলাষবাহী।
তার হৃদয়, ভেঙে গেলেও স্বপ্ন দেখে আশায়,
এক পৃথিবী—সীমানাহীন মৈত্রীর আকাশে ভাসায়।
যদি দুঃখ তার চোখে না আসতো কোনদিন,
না থাকতো যুদ্ধ, বিভেদের ঋণ?
যদি সীমান্তে ফুটতো গোলাপের রং,
দেবতা হেঁটে যেত হাতে হাতে, নির্ভয় ঢং?
মায়েরা ঘুমাত নির্ভয়ে, নিরাপদ আশায়,
পুত্র যেত না হারিয়ে সীমানার ঘোর ছায়ায়।
ভালোবাসা, ভাঙা না কোন জাত-ধর্মে,
বুনতো স্মৃতি—যা চিরন্তন কবিতায় গাঁথা প্রেমে।
ভাবো এমন পৃথিবী—যেখানে তরবারি হয় কোদাল,
কলম লিখে শান্তির গান—রক্তহীন বিজয়তাল।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের তুষারধারা,
তার হাসি গেয়ে যেত স্বাধীনতার তারারা।
না থাকত ধর্ষণের আর্তি, ধর্মীয় দ্বন্দ্ব,
শুধু সরিষা ও ধানের শস্যসন্ধ।
ভৃন্দাবনের রসে, যেখানে কৃষ্ণ নাচে,
তার সন্তানেরা নাচতো—শান্তির রঙে, ভালোবাসার কাচে।
ও ভারতকন্যা, মাটির সন্তান,
তোমার আত্মার আলো দেখাও সবার জ্ঞান।
গান্ধীর লবণ, রবীন্দ্রনাথের গান,
তোমার চেতনা ডাক দেয়—সেই মোক্ষের পবিত্র স্থান।
সুফির ঘূর্ণি, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি,
কবীরের বাণী—সত্য বলে আজও শুনি।
না কোনো ঔপনিবেশিক ছায়া, না কোনো যুদ্ধের ক্ষত,
তোমার আলোর ছায়া পড়ে শ্রাবণের বৃষ্টিতে শান্ত।
চলো গড়ি নতুন ভারত, নতুন পৃথিবী,
যেখানে ভালোবাসা হয় আইন, আর শান্তি—সত্যবী।
দিল্লির ধুলা থেকে কেরালার সবুজ,
একতা বয়ে আনুক যন্ত্রণার বুকে সুখের রসধার যুগ।
তলোয়ার ফেলো, হৃদয় ধরো হাতে,
মুক্তির গান হোক ভালোবাসার নূতন পথে।
প্রত্যেক প্রাণের রঙে রঙে,
এই শান্তির গান জ্বলুক দীপ্তিতে, আগুন হয়ে।
তার মুখ, ক্ষত-বিক্ষত হলেও, দীপ্ত মঙ্গল,
নদীর গানে জ্বলে—প্রবাহিত অনন্ত ঢল।
মহেঞ্জোদারোর প্রাচীন মাটি থেকে,
আধুনিক মুক্তিযুদ্ধে তার কন্ঠ চিরন্তন থাকে।
তার রূপ কাঁদে, তবু সে গায়,
ভালোবাসা নিয়ে উড়তে চায়।
ও ভারত, ওঠো—তোমার হৃদয়ের আহ্বান শুনি,
শান্তি, প্রেম আর অনন্তের জ্যোতিতে বাঁচো তুমি।
চলো, এ হোক আমাদের জাতীয় গান,
যেখানে সত্যের নদী বয়—হৃদয়ের প্রাণ।
বটবৃক্ষের ছায়ায় চিরন্তন তার প্রাণ,
সে বাঁচে—অদম্য, অনড়, দৃপ্ত কাব্যবান।
গাও তার মহিমা, বিশ্বজুড়ে নিরন্তর,
ধরো তাকে—হৃদয়ে, হাতে—এক সত্তা অক্ষয়, অজর।
যেদিন বিশ্ব শিখবে দেখার মতন,
সেদিন শান্তি ফোটবে—শুধু কবিতায় নয়, জীবনের প্রতিক্ষণ।
This poem has not been translated into any other language yet.
I would like to translate this poem