Bangla Kobita 10 Poem by Sanjib Saha

Bangla Kobita 10

কিছু কথা — অনন্ত শ্রদ্ধা



রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনের সর্বনাশ করেছেন।- -
এমন কথা কোনওদিন আগে শুনিনি। তাই ঢমকে ওঠাটা স্বাভাবিক। আমিও চমকে উঠেছিলাম।
রবীন্দ্রনাথ আপনার সর্বনাশ করেছেন! কেমন করে? আপনি কি ওঁকে চিনতেন? যোগাযোগ ছিল? - -
আমার বিস্ময়ের আর শেষ থাকে না।
বৃদ্ধ সামনের চূর্ণীর জলের দিকে চোখ রেখেই বলেছিলেন —হ্যাঁ, সর্বনাশ করেছেন। কী বলছিলি ভাই চিনি কি না? চিনি তো বটেই । হাড়ে হাড়ে চিনি। এমন সব্বোনেশে লোককে না চিনে কি থাকতে পারি!
আমি আরও চমকিত হই।
বৃদ্ধ আমার হাত ধরে চূর্ণীর ধারের ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরগুলোর মধ্যের একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। আমি আবার চমকালাম। ঘরভর্তি বই আর বই। বললেন —এই আমার রবীন্দ্রনাথ।
আমি তখন ছোট। বেশ ছোট। অনেক কিছুই বোঝার বয়স হয় নি।
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
এই যত বই দেখছিস, সব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা । সঙ্গে আছে রবি ঠাকুরকে নিয়ে লেখা বইও। জানিস দাদুভাই, এর মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতেই কবে যে দিন চলে গেল, বুঝতেই পারলাম না। চাষার ছেলে রবি ঠাকুর ধরতে গিয়ে হাল ধরতে ভুলে গেল প্রায়। ছেলেটা আর এক চিজ— রবির ঘরে বসে বসে সে ব্যাটা কবি হয়ে গেল। সে যে দু-চার লাইন লিখতে শুরু করল। ঘর ছাড়ল। আন্দামানে জেলেদের সাথে জুড়ে গিয়ে ডিঙিতে ভেসে বেড়াল, ব্যাটা ওদিকে জল জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছে, এদিকে মা -টা ওর জ্বলে পুড়ে মরে গেল। ছেলে আমার ঘরে ফিরে বলে কিনা, শুয়োরের চাষ করব। জমি জিরেত সব বেচে টেচে এই শ্মশানের ধারে ঘর বানাল। হায়ার সেকেন্ডারিতে স্ট্যান্ড করা ছেলে আমার ঘর ছাড়ার সময় চিরকুটে লিখে গিয়েছিল — কবিতার জন্যে আমি সব পারি। ঘর ছাড়লাম।
ঐ পাশের ঘরটা ওর ল্যাবরেটরি। ওখানে ও পলুপোকা চাষ করে। রেশমের বীজ বানায়। রিসার্চ করে। জাপান থেকে স্ট্রেন এনে নতুন নতুন হাইব্রীড বানায়। নতুন করে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় শুয়োর ছেড়ে পলু ধরেছে। চারদিকে তুঁতচাষ। মধ্যিখানে ব্যাটার ল্যাবরেটরি। আমার রবীন্দ্রনাথ ওর পাশে। জাপান ওর পেপার পড়ে ডেকেছিল। বলেছিল চাকরি দেবে। অনেক টাকা মান সম্মান।
ও বলল— ওসব আমার ধাতে সইবে না। বেঁচে থাক আমার চূর্ণীর ধার ।
জানিস দাদুভাই — তোকে আজ চুপিচুপি একটা কথা বলে যাই, ও এখন কবিতা লেখে না। বলে কবিতা আসে না। কিন্তুু আমি জানি ও কবি। ভেতর ওর সবসময় উথাল পাথাল হয়। বাইরেটা ওর এখন অমন সাজানো গোছানো দেখলে কী হবে অন্তর অবিন্যস্ত। আমার রবি ঠাকুর ওর সর্বনাশ করে চলে গেছে।

আমি এক কবির খুব কাছাকাছি ছিলাম অনেকদিন। তিনি কবিতা লিখতেন না আর। জিজ্ঞেস করলে বলতেন — কবিতা আসে না আর। ক’বছর আগেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আচ্ছা কবিদের সর্বনাশ কীসে হয়!
——————————————————————————————
সঞ্জীব

Saturday, May 9, 2015
Topic(s) of this poem: life
COMMENTS OF THE POEM
READ THIS POEM IN OTHER LANGUAGES
Close
Error Success