কুন্তল গ্রামে তখন খরা ছিলো। একটি ফসলও ফলেনি। কৃষকশ্রেণির মধ্যে যেন আত্মহত্যার এক প্রতিযোগিতা শুরু হলো! কে কার আগে মরবে! এদিকে জমির যা হাল তাতে তাদের ঋণ শোধ তো দূরের কথা নিজে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে । হাহাকার আর আত্মহত্যার প্রবনতাই দেখা যাচ্ছে কুন্তলের প্রতিটি পরিবারে। ঠিক সেই রূপভাবে একটি দারিদ্র্য এবং নিষ্ঠুর ভাবে দাঁত কামড়ে বেঁচে আছে নীলাঞ্জনার ছোট্ট একটা পরিবার। পরিবার বলতে শুধু নীলাঞ্জনা আর তাঁর বাবা। নীলাঞ্জনার পিতা হরিচন্দ্র মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সংসারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। জায়গা বলতে শুধু বিঘে ছয় জমিনই আছে তাঁর। এটার সকল কাগজপত্র ব্যাংকের অধিকর্তার নিকট জমা আছে। যার পরিবর্তে সে পঁচিশ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছর নাগাদ খরার জন্যে ফসলের অনেকটাই লোকসান হয়েছে। যার জন্য ঋণশোধ করা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।যদিও ব্যাংক অধিকর্তা লিখিত নোটিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু কি আর করার, সবকিছুই এখন ভগবানের হাতে। বৃষ্টি এলেই রক্ষে। কিন্তু তাঁর আর শেষ রক্ষে হলোনা। শত চেষ্টার পরও ওই টাকা শোধ করতে পারেনি। তাই ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী হরিচন্দ্রকে ভিটেবাড়ি ছাড়তেই হবে। ব্যাংক নোটিশ পাঠিয়েছে যে দশ দিনের মধ্যেই তাঁদের ভিটে ছাড়তে হবে। যেদিন তিনি সম্পূর্ণঋণ শোধ করে দিতে পারবেন সেদিন তারা ভিটেবাড়ি ফেরত দেবেন।
হরিচন্দ্র এখন নিরুপায়। একা এই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন তা তিনি স্থির করতে পারছেন না। তখন নীলাঞ্জনা সবে মাত্র দশে পারা দিলো। বয়সে ছোট্ট হলেও ভালো-মন্দ বিচার করার মানসিকতা কিছুটা হয়তো জন্মেছিলো। বাবার কষ্টের পরিমাণ বোঝার ক্ষমতাটা হয়তো কম ছিলো। এই ছোট্ট মেয়ে নীলাঞ্জনার শৈশব যে এতো দুঃখে কাটবে তা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। এখন তো নীলাঞ্জনার দৌড়ানো-খেলানোর বয়স। আর এখনই তাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে! ভগবানের এ কোন বিচার! মা মরা মেয়েটার এই বাবাটাই তো সব। কিন্তু এই দুর্যোগের সময় দিনে একবেলা খেয়ে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। খরার জন্য ফসল ফলতে না পারায় কাজও মিলছেনা তাঁর। এদিকে আবার ভিটেবাড়ি চলে যাওয়ার চিন্তা। কোনো মতেই তো শেষ রক্ষে হচ্ছেনা। আর মাত্র এক দিন বাকি। ভোর হলেই ভিটে ছাড়তে হবে তাদের।
...
Read full text